শরীর ফিট রাখার কৌশল

শারীরিক সুস্থতা কে না চায়? কিন্তু শরীরকে ফিট এবং মেদহীন রাখতে যে পরিশ্রম এবং নিয়ম-কানুন মেনে চলা দরকার তা অনেকেই করতে চান না। অতঃপর স্থূলকায় দেহ এবং সেই দেহে নানান রোগের বসবাস, যেটা কারোরই কাম্য নয়। আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর উপায়গুলো মেনে চলার সময় খুব কম মানুষেরই আছে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে একটু একটু পরিবর্তনের মাধ্যমে কিন্তু সহজেই সেটা করা সম্ভব হয়। আজ আমরা কী কী উপায় অবলম্বন করে ফিট থাকা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করবো।
খাদ্যাভাসঃ
আমাদের শরীরকে ঠিকমতো কাজে লাগানোর জন্য যতটুকু খাবার খাওয়া দরকার তার অতিরিক্ত খেলেই জমে যায় মেদ। তাই সবার আগে নিজের জিহ্বায় লাগাম টানতে হবে। বর্তমান সময়ে ফাস্ট ফুড অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও এগুলো শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এসব খাবার না খাওয়াই উত্তম। এছাড়াও প্রসেসড ফুড, টিনজাত, চিনিজাত, লবণাক্ত, সোডা বা কার্বোনেটেড বেভারেজ ইত্যাদি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। ঘরে তৈরি সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করুন। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন-খাবার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না কোনো কিছুই। পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে হবে। তাই এসব পুষ্টির উৎস এমন খাবার যেমন ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, বীজ, তেল বা ঘি খেতে হবে প্রতিদিন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে। আর তার সাথে পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণ পানি। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। যারা ওজন কমাতে বা ধরে রাখতে চান তাঁরা কেবল খাবার আগে এক গ্লাস পানি পান করেই সেটা করতে সক্ষম হবেন।
পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিনঃ
আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততাই হল সব রকম অনিয়মের প্রাথমিক কারণ। কিন্তু এই ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিতে হবে নিজেকে। ঘুমাতে হবে সময় মতো। দিনে অন্তত ৭ ঘন্টা ঘুমাতেই হবে। তাহলেই আপনার সুস্থ থাকার অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে। তার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে রাখতে হবে চিন্তামুক্ত।
১. প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবার এবং ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করুন।
২. ঘুমাতে যাবার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকল ধরণের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার, টিভি ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. শোয়ামাত্র ঘুম না আসলে বই পড়ে দেখতে পারেন। তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে।
৪. একদম অন্ধকার ঘরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন যেখানে কোনো রকম বাহ্যিক শব্দ আসে না।
৫. প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত মেজে, ঢিলেঢালা পোশাক পরে, চুল বেঁধে পরিপাটি হয়ে নিন।
৬. সম্ভব হলে চটজলদি হট শাওয়ার সেরে নিতে পারেন। আর বিছানায় বা ঘরে হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘুম ভালো হয়।
ঘরের
কাজ করুনঃ
ঘরের কাজে অংশগ্রহণ হতে পারে ফিটনেসের একটি চমৎকার মাধ্যম। ঘরের কাজে সাহায্যকারী থাকলেও আপনার কিছু কিছু কাজ হবে তার জন্যও সাহায্য। ঘুম থেকে উঠে বিছানা গোছানো, নিজের কাপড় গুছিয়ে রাখা, গাছপালার যত্ন এবং বাগান করা ইত্যাদি টুকটাক কাজ থেকে শুরু করে ঘর ঝাঁট দেওয়া, ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া, আসবাবপত্র মোছা ইত্যাদি কাজ আপনার শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করবে। আর নিজের ঘর সাজানোর জিনিস আপনিই হয়ে উঠতে পারেন এক্সপার্ট! কয়েকমাস পরপর কারো সাহায্য নিয়ে আসবাবপত্রগুলো একটু নেড়েচেড়ে নিতে পারেন। ঘরেও নতুনত্ব আসলো আর আপনিও কিছু ক্যালোরি পোড়াতে পারলেন।
পরিশেষেঃ
ছোট ছোট অভ্যাস বদলে কীভাবে ফিটনেস ধরে রাখা যায় আশা করছি এই প্রতিবেদনটি থেকে তা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের অনেকেই আছেন যারা অনেক চেষ্টার পরও ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। ওজন বৃদ্ধিতে হরমোনাল ইমব্যালান্স, দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা ঔষধ সেবন, পারিবারিক সূত্রতা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত খাবার চাহিদা, অনিদ্রা, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ ইত্যাদি বিষয় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এক্ষেত্রে উপরোক্ত টিপসগুলোর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেনে চলতে হবে। মনে রাখবেন, ফিটনেস মানে এককালীন লক্ষ্য অর্জন নয়, সুস্থ থাকার জন্য এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। নিজের প্রতি ভালোবাসা আর আত্মবিশ্বাসই আপনার সফলতার চাবিকাঠি। তাই কালকের জন্য় অপেক্ষা না করে আজই দেখুনই না কী শুরু করা যায়!
আপনার জন্য শুভকামনা।