সুস্থ্যতার জন্য মৌসুমি ফল
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মৌসুমি ফলের বিকল্প নেই। আমরা যারা ডায়েট করি তাদের জন্য ফল খুবই উপযোগী। তাই প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে ফল। কিন্তু কী ধরনের ফল খাবেন? কোন ফল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কোন ফল রোগের ঝুঁকি কমায়? তা জানতে হবে। শুধুমাত্র পুষ্টিগুণ নয়। আরও নানা কারণে দেশীয় ফল বেশি খেতে বলছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। তবে শুধুমাত্র পুষ্টিগুণ নয়, আরও নানা কারণে অ্যাভোকাডো, কিউই, ব্লু বেরি, রাস্প বেরি, ড্রাগন ফ্রুটের থেকে আম, কলা, পেয়ারাকেই এগিয়ে রাখছেন তারা।
দেশীয় ফলের ক্ষেত্রে ফলনের কিছু দিনের মধ্যেই তা বাজারে চলে আসে। এমনকি বাড়ির গাছ হলে সে ক্ষেত্রে ফল পাকলেই তা খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রে উৎসেচকের পরিমাণ বেশি থাকায় তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দেশীয় এলাকার মাটি, পানি, বাতাসেই বেড়ে ওঠে এই ফলের গাছ। তাই স্থানীয় সংক্রমণ বা মৌসুমি সংক্রমণের ক্ষেত্রে এদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাও বেশি। কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফল স্বাদে অনেক সময় অতুলনীয় হলেও এই ফল আমদানি করার সময় অনেক ক্ষেত্রেই সতেজ দেখানোর জন্য মেশানো হয় প্রিজারভেটিভ। ভেঙে যায় উৎসেচক, কমে পুষ্টিগুণ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি মৌসুমি ফলের
উপকারিতা সমন্ধেঃ-
আমঃ
আমে বিদ্যমান ক্যারোটিনয়েডগুলো
কোলন ও ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বয়সজনিত চোখের
সমস্যা প্রতিরোধ করে। আমের পটাশিয়াম, খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো উচ্চরক্তচাপ
ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। পেকটিন খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। খাদ্য-আঁশ ও
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এক দিন পরপর দৈনিক শর্করার
চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আম খেতে পারেন।
জামঃ
কালো জামের অ্যান্থোসায়ানিন হৃদ্রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। পটাশিয়াম উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে,
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো ফ্রি-রেডিক্যাল কমিয়ে ত্বকের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। জামের খনিজ লবণ হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করতে সাহায্য করে। শর্করা কম থাকায় এবং খাদ্য-আঁশের উপস্থিতির কারণে কালো জাম খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিনই কালো জাম খেতে পারেন।
কাঁঠালঃ
রসাল ও সুমিষ্ট স্বাদের ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এই ফলে শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম আছে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও বি ভিটামিনেরও ভালো উৎস এটি। কাঁঠালের বীজ ও কাঁচা কাঁঠালে রয়েছে যথেষ্ট প্রোটিন, ক্যালরি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও খাদ্য-আঁশ। কাঁঠালের ফাইটোকেমিক্যালসগুলো ফ্রি-রেডিক্যাল দূর করে কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। ফলে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ছাড়া এর ভিটামিন সি সর্দি-কাশি প্রতিহত করে, খাদ্য-আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
লিচুঃ
মিষ্টি গন্ধ ও স্বাদের রসাল ফল লিচুতে রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। এ ছাড়া এই ফলে বিদ্যমান কপার, আয়রন, ফোলেট লোহিত কণিকা তৈরিতে; বি ভিটামিনগুলো বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে; পটাশিয়াম ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লিচুর খাদ্য-আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো রোগ
প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আনারসঃ
বাইরে খাঁজকাটা আর ভেতরে সুমিষ্ট রসে টইটুম্বুর আনারস শরীরে পানির চাহিদা মেটায়। পুষ্টিগুণে অতুলনীয় এই ফল। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলটিতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি ও যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। ঠান্ডা-কাশি-জ্বর এমনকি জন্ডিসের ক্ষেত্রে ভেষজ হিসেবে কাজ করে। ক্ষত সারাতেও এই ফলটি দারুণ উপকারী। আনারস রক্ত পরিষ্কার রাখে ফলে এটি রক্তনালী, শিরা বা ধমনীতে চর্বি জমা রোধ করে। কিডনি এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যায় যুগ যুগ ধরে গ্রামবাংলায় সমাধান হিসেবে এই আনারস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হাঁপানি ও গেঁটে বাতের সমস্যায়ও আনারস প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু ফলই নয়, এর পাতার রসেও আছে ঔষধি গুণাগুণ।
পরিশেষেঃ
আশা করছি মৌসুমি বিভিন্ন ফলের বিভিন্ন গুণাগুণ আজকের লিখাটিতে কিছুটা হলেও আমরা তুলে ধরতে পেরেছি। এর মধ্যে কিছু ফল পরিচিত হলেও কিছু কিছু ফল হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মধ্য থেকে। একেক ফলে থাকে একেক ভেষজ ও খাদ্যগুণ। সুতরাং পরবর্তী প্রজন্মকে এইসব ফল চেনাতে বিদেশী ফলের পাশাপাশি দেশী ফল খাবারও অভ্যাস করতে হবে। টাটকা এবং বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে ফল কিনতে আজই আমাদের সাইটে AponHut.com ভিজিট করুন।