রমজান মাসে শরীর সুস্থ রাখতে খাদ্যের তালিকা

 প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৪০ অপরাহ্ন   |   নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী , টিপস ও গাইড

রমজান মাসে শরীর সুস্থ রাখতে খাদ্যের তালিকা

চলছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। রমজান মাসে সঠিক উপায়ে সিয়াম সাধনা এবং সকল ইবাদত করার জন্যে শারীরিক ভাবে সুস্থ্য থাকা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। গ্রীষ্মের প্রখর গরমের মাঝে সারাদিনের রোজা রেখে ইফতারে আমরা অনেক সময় ঐতিহ্যগত কারণে এমন সব খাবার খেয়ে থাকি যেগুলো আমাদের শরীরে বিরুপ প্রভাবের সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খাবার না খাওয়ার ফলে শারীরিক অস্বস্তি, বদহজম ছাড়াও নানান ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রমজানে চাই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার। আমরা সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাই। এ খাবারগুলো অনেক সময় বাইরে থেকে কিনে আনি। যার মান নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। 

রমজানের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমেই সুস্থ থেকে এবং ইবাদত সঠিক ভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। সিয়াম সাধনার এই মাসে কোন খাবারগুলো আমাদের দৈনিক খাবারের তালিকায় রাখা উচিৎ সে বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

খাদ্য তালিকায় প্রথমেই আসে খেজুর বা খোরমা। শরীরের জন্যে উপকারী বহুউপাদান যেমন, কার্বোহাইড্রেট, সুগার, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন ফাইবার ইত্যাদি রয়েছে খেজুর এবং খোরমাতে।

সারাদিনের রোজার শেষে ইফতারের সময় থেকে সেহরি পর্যন্ত পান করুণ কমপক্ষে আট থেকে দশ গ্লাস সাধারণ তাপমাত্রার পানি। এই পানি আপনার হজমে সহায়তা ছাড়াও শরীরকে ডিহাইড্রেট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে। তরল পানীয় যেমন ফলের শরবত, দৈয়ের শরবত, রুহ-আফজা ইত্যাদি রাখতে পারেন আপনার তালিকায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে স্বাদ বাড়ানোর জন্যে উপাদান যেমন – চিনি, দুধ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।

ইফতার, সন্ধ্যারাতের খাবার অথবা সেহরি সকল ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন খাদ্য তালিকায় থাকে সুষম খাবার। আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেল, আঁশ ইত্যাদি মিলেই সুষম খাবার তৈরি করে মৌসুমী তাজা ফল এবং বিভিন্ন রকমের সবজি বা সবজি দিয়ে তৈরি খাবার যুক্ত করুণ রমজানের খাদ্য তালিকায়। নিয়মিত ফল ও সবজি গ্রহণ কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করবে।

পেট এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্যে খেতে পারেন সহজে হজমযোগ্য খাবার যেমন, দই, চিড়া ইত্যাদি। এই খাবার একই সাথে যেমন আপনার পেট ভরতে সাহায্য করবে তেমনি সহজে হজম হবে। ছোলা রোজার সময় এবং এর বাইরেও অনেকে খেয়ে থাকেন। শরীরের জন্যে বেশ উপকারী এই ছোলা আপনি রাখতে পারেন আপনার খাবারের তালিকায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে তেলে ভুনা করা মসলা যুক্ত ছোলা থেকে কাঁচা ছোলা খাবার অভ্যাস করা ভালো।

রমজান মাসে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে ইসবগুল পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার যেমন লাল আটা, বাদাম, ছোলা, ডাল ইত্যাদি রমজান মাসের খাদ্য তালকায় যুক্ত করতে পারেন। এ খাবারগুলো হজম হতে বেশ সময় লাগে তাই পেট ভরা থাকে দীর্ঘক্ষন।

গরমের দিনে রোজা রাখার ফলে অনেক সময় শারীরিক ভাবে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে, সে ক্ষেত্রে ইফতারে পান করতে পারেন ডাবের পানি বা খাবার স্যালাইন। সকল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তরলদুধ বা দুগ্ধজাত স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে পারেন আপনার রমজানের খাদ্য তালিকায়। 

পরিশেষেঃ 
সাহরি না খেয়ে রোজা রাখার অভ্যাস মোটেও ভালো নয়। শেষ রাতে জটিল শর্করা বা ভাত-রুটির সঙ্গে আমিষ (মাছ-মাংস বা ডিম) খাবেন। এ সময় পূর্ণ আহার করবেন। দুধও খেতে পারেন। এটা হবে আপনার দিনের প্রধান খাবার, অনেকটা মধ্যাহ্নভোজের মতো। রমজান মাসে ব্যায়াম করার তেমন প্রয়োজন না থাকলেও, ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। নামাজ পড়ার কারণে ইবাদতের সাথে ব্যায়ামের কাজটিও হয়ে যাবে।
রমজানুল মোবারক