মানবদেহে পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৌসুমি ফল আমের গুরুত্ব
মানবদেহে পুষ্টিচাহিদা পূরণে প্রতিটি মৌসুমে সজাগ দৃষ্টি রাখা একান্ত কর্তব্য। সেই সময় যদি হয় আরও মধুমাস, অর্থ্যাৎ গ্রীষ্মকাল। এই সময়ে চারদিকে পাকা ফলের মিষ্টি গন্ধে ভরে যায় মন।গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড দাবাদাহে অস্থির হয়ে উঠে মানুষের জীবন। এই গরমে প্রচুর ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানির স্বল্পতা ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা হয়।ফলে সহজেই মানুষের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে প্রয়োজন আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা। এই মধুমাসে আম আমাদের পুষ্টি পূরণে সহায়ক হতে পারে। এই সময়ে বাজার জুড়ে টসটসে পাকা আমের মেলা, তার মোহনীয় সুবাসে জিভে জল এসে যায়। আম শুধুমাত্র সুস্বাদুই নয়, বরং এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ এবং ফাইবারও।
সারাদেশে এত পরিমাণ আম বাগান থাকার দরুন আম যে আমাদের জাতীয় গাছ হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে আম বিক্রি করার জন্য ফলের বাজার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেকেও আবার তাজা এবং ফ্রেশ আম ঘরে বসে পাওয়ার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বেছে নিচ্ছেন।
আপনি যদি ডায়েটের ভয়ে আম না খেয়ে থাকেন, তাহলে আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিনঃ
আমের জাতঃ
আমের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জাত। ধরন অনুসারে এর স্বাদ, রং ও গন্ধে ভিন্নতা দেখা যায়। আমের পরিচিত প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে খিরসা, ফজলি, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, গোপালভোগ, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, গোপাল খাস, কেন্ট, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, অরুনা ইত্যাদি। পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম রয়েছে।
আমের বিভিন্ন পুষ্টিগুণঃ
আম আমাদের কর্মশক্তি জোগায়।পুষ্টি উপাদানে ভরপুর উপকারী ফল আম। এতে আছে প্রচুর খনিজ লবণ এবং বিভিন্ন ভিটামিন। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে আমে। এছাড়া আছে অ্যামাইনো এ্যাসিড, পটাসিয়াম ও কপার। আমে থাকা বিটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক এ্যাসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল, ক্যফিক এ্যাসিড ইত্যাদিও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
কাঁচা আমে ৯০ মাইক্রোগ্রাম এবং পাকা আমে ৮ হাজার ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা আম ৪৪ কিলোক্যালরি ও পাকা আমে ১০ ক্যালরি শক্তি প্রদান করে। আরও আছে আয়রন, যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। কাঁচা আমে ৫ দশমিক ৪ ও পাকা আমে ১ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম হাড় সুগঠিত করে, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে। কাঁচা আমে ১০ মিলিগ্রাম ও পাকা আমে ১৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। আম থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।
আম আরো যে সব ঘাটতি পূরণ করেঃ
মিনারেলের ঘাটতি দূর করেঃ
শরীরে মিনারেলের ঘাটতি দেখা দিলে নানা অসুখ বাসা বাঁধতে পারে। আম খেলে এই ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়। কারণ আমে আছে প্রচুর পটাশিয়াম। যেকোনো পরিশ্রমের পর আম খেলে পটাশিয়াম ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়। শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রয়োজনীয় লবণের ঘাটতিও পূরণ করে আম।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ
শিশুকে আম খেতে দেওয়া উচিত কারণ এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আমে আছে গ্লুটামিক অ্যাসিড যা মস্তিষ্কের কোষ উজ্জীবিত করে থাকে। ফলে বাড়ে মনোযোগ। তাই মস্তিষ্কের চাপ কমাতে আম খাওয়া যেতে পারে।
হজমে সহায়কঃ
হজমের নানা সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। সেসব সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে আম। এই ফলে আছে প্রচুর আঁশ। তাই আম খেলে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা তাড়াতেও আম সমান উপকারী।
আম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাঃ
আম উপকারী ফল হলেও এটি একসঙ্গে খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এই ফল খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বেশি আম খাওয়া ক্ষতিকর। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা আম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একটি মাঝারি আমে তিন গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই একসঙ্গে বেশি আম খেলে বদ হজম বা ডায়েরিয়া হওয়ার ভয় থাকে।
পরিশেষেঃ
আমের প্রতি আমাদের ভালোবাসা জীবনের নানা কর্মকাণ্ডের সাথে মিশে একীভূত হয়ে আছে। আমাদের দেশে আম সেরা ফল হিসেবে ফলের রাজা। তাই পুষ্টি পুরণে আম খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
আপনি কি ফ্রেশ আম খুজছেন? তাহলে আর দেরি কেনো আপনহাট.কম এ রয়েছে সারাদেশের আম বিক্রেতাদের বিজ্ঞাপনগুলি থেকে সঠিক দামে কিনতে পারেন আপনার পছন্দের আম।