বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য

 প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন   |   শিক্ষা

বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য

বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। পয়লা বৈশাখ এ উৎসব পালিত হয়। পৃথিবীর যেখানে যত বাঙালি আছে, তারা সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ পালন করে। বাংলাদেশে একসময় এদিনে ‘পুণ্যাহ অনুষ্ঠান হতো জাঁকজমকভাবে। এখন হালখাতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, বৈশাখী মেলা, আবৃত্তি-নাচ-গানে মুখরিত সারাদেশ। কোনো এলাকায় নৌকাবাইচ, হাডুডু, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই ইত্যাদি খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পালন করে তিন দিনব্যাপী আনন্দময় ‘বৈসাবি উৎসব। পণ্ডিতরা মনে করেন মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন। এ দিনটা যেমন আনন্দ উল্লাসের জন্য তেমনি পরস্পর কুশল বিনিময় ও কল্যাণ কামনার জন্য। আমরা একে অন্যকে বলি, ‘‘শুভ নববর্ষ। এ দিনে শহরাঞ্চলে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার চল হয়েছে ইদানীং। নতুন অথবা সুন্দর জামাকাপড়  পরে সব বয়সের মানুষ বাংলা নববর্ষে আনন্দে মেতে ওঠে। বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব।

বৈশাখের সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক যেমন নিবিড়, তেমনি অর্থনৈতিক সম্পর্কও তাৎপর্যপূর্ণ। পহেলা বৈশাখ ও নববর্ষ বাঙালির বিজয় পতাকা আকাশে তুলে ধরে। বাঙালির এই বিজয় হচ্ছে সংস্কৃতির বিজয়। এই সাংস্কৃতিক বিজয়ের ফল ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বাঙালির এই সর্বজনীন উৎসব। প্রতি বছরের মতো রাজধানী ঢাকায় এবারো রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাঙালির বর্ষবরণ শুরু হবে। এই অনুষ্ঠানটিও এখন বাঙালির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্য এ কারণে যে, পাকিস্তানি শাসনামলে নববর্ষ উদ্‌যাপনকে বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করেছিল। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেছিল। এতে হাজার হাজার বাঙালি যোগ দিয়েছিল। এই দিন বাংলা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়। লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে চলে আসে। নববর্ষ মানে নবজাগরণ। বাঙালির পুরনো ঐতিহ্যকে শহরে থেকেই স্মরণ করি অথবা ঐতিহ্যের কাছে ফিরে যাই। বাঙালি নারীরা সুন্দরভাবে সেজে রমনা বটমূলে কিংবা ধানমন্ডি লেকে যায়, পুরুষরাও এই দিনে বাঙালি সংস্কৃতির ধারকবাহক হয়ে ওঠে। এদিন আমরা ঢোল কিনে জোরে জোরে বাজাই, বেলুন উড়িয়ে দেই মুক্ত আকাশে, প্রিয়ার খোঁপায় পরিয়ে দিই গাঁদা-গোলাপ। বাংলা গানের প্রতি অতিদরদি হয়ে উঠি।

আসুন বৈশাখী মেলার আবহে আমরা সবাই গড়ে তুলতে পারি স্ব স্ব নীড়। যে নীড়ে থাকবে না কোনো কৃত্রিমতা। এতে সবারই মঙ্গল ছাড়া অমঙ্গল হবে না। উন্নত জীবন গড়ার পাশাপাশি অতীত স্মৃতিকে মনে জাগ্রত রাখতে পারলেই প্রকৃত বাঙালির পরিচয়ের মৃত্যু ঘটবে না।

নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরো বিস্তার লাভ করুক এ প্রত্যাশা আমাদের।